ঘরে বসে বিটকয়েন মাইনিং, সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত
২০২৫ সালের শুরুতেই বিটকয়েন $১,০০,০০০ ছাড়িয়েছে। ETF (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড) চালু হওয়া এবং সরবরাহ হ্রাসের কারণে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই এখন জানতে চাইছেন “আমি নিজে কীভাবে এই বাজারে অংশ নিতে পারি?” আর এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয়েছে ঘরে বসে বিটকয়েন মাইনিং নিয়ে আগ্রহ।

২০২৫ সাল বিটকয়েন ও ক্রিপ্টো দুনিয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক সময়। এক দশক আগে যেখানে বিটকয়েন ছিল শুধুই প্রযুক্তি প্রেমীদের এক রহস্যময় খেলা, আজ তা বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভ সম্পদে পরিণত হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি যেমন স্ট্র্যাটেজি বা জাপানের মেটাপ্ল্যানেট এখন বিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন কিনছে, ধরে রাখছে এবং সেটাকে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ হিসেবে দেখছে। এই প্রবণতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে বিটকয়েন এখন আর পরীক্ষামূলক নয়, এটি মূলধারার অর্থনীতির অংশ।
এছাড়াও, নিয়ন্ত্রণের দিক থেকেও ২০২৫ সালে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের ফিরে আসার ফলে ক্রিপ্টো-বান্ধব মনোভাব তৈরি হয়েছে এবং SEC-এর হস্তক্ষেপ কিছুটা কমেছে। এমনকি নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় বিটকয়েন মাইনিংকে সমর্থন করার কথাও উঠে এসেছে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন MiCA নীতিমালা চালু করে বিনিয়োগকারী ও মাইনারদের জন্য স্বচ্ছ নিয়ম তৈরি করেছে, যার ফলে নিয়ন্ত্রণগত অনিশ্চয়তা অনেকটাই দূর হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দাম, যা ২০২৫ সালের শুরুতেই বিটকয়েন $১,০০,০০০ ছাড়িয়েছে। ETF (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড) চালু হওয়া এবং সরবরাহ হ্রাসের কারণে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই এখন জানতে চাইছেন “আমি নিজে কীভাবে এই বাজারে অংশ নিতে পারি?” আর এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয়েছে ঘরে বসে বিটকয়েন মাইনিং নিয়ে আগ্রহ।
আপনি যদি ভাবেন বিটকয়েন শুধু কিনে রাখা যায়, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি চাইলে নিজেই এটি "উৎপাদন" করতে পারেন। এবং হ্যাঁ, আপনি আপনার নিজের বাসা থেকেই এটি করতে পারেন! শুধু দরকার কিছু প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সঠিক যন্ত্রপাতি, এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা। এই লেখায় আমরা দেখাবো ২০২৫ সালে কীভাবে ঘরে বসে বিটকয়েন মাইনিং করা যায়, কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহারযোগ্য, কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন, খরচ কত হতে পারে এবং কোন উপায়ে সবচেয়ে লাভজনক হতে পারে।
২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিটকয়েন মাইনিং শিল্পের আয় ৬,৭০০%-এরও বেশি বেড়েছে! এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দেয় যে এখনই সময় ঘরে বসে মাইনিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখার।
১. লটারি মাইনিং: ভাগ্য নির্ভর এক অদ্ভুত মাইনিং যাত্রা
আপনার যদি বাজেট সীমিত থাকে, তবে বিটকয়েন মাইনিং করার একটি রোমাঞ্চকর, যদিও অত্যন্ত অনিশ্চিত পথ হতে পারে লটারি মাইনিং। এই পদ্ধতিতে আপনি খুব কম শক্তির ডিভাইস ব্যবহার করেও একটি সম্পূর্ণ বিটকয়েন ব্লক খুঁজে পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। যদিও বাস্তবে এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা, তবুও এমন নজির রয়েছে, যা নতুন মাইনারদের মধ্যে উৎসাহ জোগায়।
২০২৪ সালের জুলাই মাসেই এর বাস্তব উদাহরণ ঘটেছে। মাত্র তিন TH/s হ্যাশ পাওয়ার ব্যবহার করে, যা সাধারণত দুটি ছোট USB মাইনার দিয়ে অর্জনযোগ্য, এক ব্যক্তি পুরো একটি বিটকয়েন ব্লক মাইন করেন। তিনি পেয়েছেন প্রায় ৩.১৯২ BTC, যার বাজারমূল্য ছিল দুই লাখ ডলারেরও বেশি! এমন জয় সাধারণত হাজার বছরের মধ্যে একবার ঘটে। কিন্তু Solo CKPool প্ল্যাটফর্ম ও দারুণ ভাগ্যের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
লটারি মাইনিংয়ের মূলকথা হলো কম খরচে, কম শক্তিতে, পুরোপুরি ভাগ্যের উপর নির্ভর করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এ পদ্ধতিতে বাজারে জনপ্রিয় কিছু ডিভাইস রয়েছে যেমন: Bitaxe HEX – একটি ওপেন-সোর্স ASIC ডিভাইস, যা প্রায় ৩ TH/s গতি দেয় এবং দাম $৬০০-এর মতো। এটি সহজেই Raspberry Pi-র সাথে যুক্ত হয়ে মাইনিং শুরু করতে পারে। আরেকটি জনপ্রিয় মডেল হলো GekkoScience R909, একটি USB মাইনার, যা ১.৫ TH/s গতিতে চলে। এই ডিভাইসগুলো মূলত শৌখিন ব্যবহারকারীদের জন্যই তৈরি, যাদের লক্ষ্য লাভ নয় বরং মজাদার একটি অভিজ্ঞতা।
এই ধরনের মাইনিং দিয়ে প্রতিদিন বা মাসে নির্দিষ্ট আয় করা যায় না। বরং, এটি অনেকটা ডিজিটাল স্লট মেশিনের মতো, যেখানে আপনি একেকটা “স্পিন” দেন আর ভাগ্য ভালো হলে বিশাল পুরস্কার পেয়ে যাবেন। এতে আপনি নেটওয়ার্কের সুরক্ষাতেও অবদান রাখছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন এত অনিশ্চয়তার মাঝেও লটারি মাইনিং করে? এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
১. এটি বিটকয়েন নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, কারণ আপনি নিজে একটি পুরো নোড পরিচালনা করেন।
২. নতুনদের জন্য এটি মাইনিং শেখার একটি দারুণ উপায়, যেখানে হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন থেকে ব্লকচেইন বোঝা পর্যন্ত অনেক কিছু শেখা যায়।
৩. যদি ভাগ্য ভালো থাকে এবং আপনি একটি ব্লক মাইন করতে সক্ষম হন, তাহলে পুরো পুরস্কারটা শুধুমাত্র আপনার কোনো ভাগাভাগির প্রয়োজন নেই।
এই শখের মাইনিং অনেকটা হ্যান্ডমেড পিসি তৈরি, পুরনো রেডিও সারানো কিংবা শেলফে সাজানো রেট্রো গ্যাজেটের মতো। একদিকে প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা, অন্যদিকে ভাগ্যের রোমাঞ্চ এই দুয়ের মিশ্রণেই তৈরি হয়েছে লটারি মাইনিং সংস্কৃতি।
বিশেষত Solo CKPool প্ল্যাটফর্ম এমন শৌখিন মাইনারদের জন্য আদর্শ, যারা চাইছেন নিজের শেয়ার সরাসরি বিটকয়েন নেটওয়ার্কে পাঠাতে। এখানে কেউ আপনাকে আয়ের অংশ দেবে না, আবার কেউ কিছু কেটেও নেবে না – সফল হলে পুরো ব্লক পুরস্কার, ফি বাদে, আপনার।
তাই আপনি যদি সীমিত বাজেটে বিটকয়েন মাইনিংয়ে প্রবেশ করতে চান, তাহলে লটারি মাইনিং হতে পারে আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও একটি চমৎকার শুরু।
২. ASIC মাইনিং – একক খননের রোমাঞ্চ ও বাস্তবতা
বিটকয়েন মাইনিং অনেকের কাছে এক ধরনের লটারির মতো – যেখানে আপনি একটি টিকিট কিনেন, আর ভাগ্য ভালো হলে বিশাল পুরস্কার পান। কিন্তু যদি আপনি ভাগ্যের উপর ভরসা না করে নিজেই মাঠে নামতে চান, তাহলে আপনার জন্য সেরা পথ হলো ASIC মাইনিং। ASIC এর পুরো নাম হলো "Application-Specific Integrated Circuit", যা কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি – যেমন বিটকয়েন মাইনিং। এই যন্ত্রগুলো অত্যন্ত দ্রুত হ্যাশ গণনা করতে পারে এবং প্রচলিত CPU বা GPU-এর তুলনায় হাজার গুণ বেশি কার্যকর।
২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী ASIC মডেলগুলোর মধ্যে Antminer S21 Hydro অন্যতম। এটি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০০ টেরাহ্যাশ (TH/s) গতিতে কাজ করতে পারে, এবং আগের মডেলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তি-সাশ্রয়ী। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এখন বিটকয়েন নেটওয়ার্কে মোট হ্যাশরেট প্রায় ৫০০ এক্সাহ্যাশ/সেকেন্ড (EH/s), যা এক্সট্রিম লেভেলের প্রতিযোগিতা তৈরি করে। এই পরিস্থিতিতে একটি মাত্র S21 Hydro মেশিন ব্যবহার করলে আপনি নেটওয়ার্কের মাত্র ০.০০০০৮% হ্যাশ পাওয়ার অর্জন করবেন। এমন ক্ষুদ্র হ্যাশ অংশ নিয়ে একটি সম্পূর্ণ ব্লক খুঁজে পাওয়া এক রকম অলৌকিক ঘটনা – কারণ প্রতিদিনের হিসাবে আপনি প্রায় ৮.৬ বিলিয়নের একজন প্রতিযোগী হবেন।
তবে আপনি যদি ২০টি ASIC একসঙ্গে চালান, তাহলে আপনার মোট হ্যাশরেট হবে প্রায় ৮ পেটাহ্যাশ (PH/s), যা বছরে গড়ে একবার একটি ব্লক পাওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি করাটা মোটেও সহজ নয়। এই পরিমাণ যন্ত্র পরিচালনার জন্য দরকার বিশাল বিনিয়োগ, শক্তিশালী কুলিং বা ভেন্টিলেশন সিস্টেম এবং ২৪/৭ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। এর পাশাপাশি, বিটকয়েন নেটওয়ার্কে কখন ব্লক আসবে, সেটা একদমই অনিশ্চিত। কখনো ঘণ্টায় একাধিক ব্লক আসে, আবার কখনো একটাও আসে না।
তবুও অনেক উৎসাহী মাইনার একক ASIC মাইনিংকেই বেছে নেন। কারণ একটাই – যদি আপনি নিজেই একটি ব্লক খুঁজে পান, তাহলে তার পুরস্কার পুরোপুরি আপনার। বর্তমানে একটি ব্লকের পুরস্কার তিনটি বিটকয়েনের বেশি, এবং সঙ্গে থাকে সংশ্লিষ্ট সব ট্রানজ্যাকশনের ফি। এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি, যা অনেককেই ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেয়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ২০২৫ সালে প্রতি TH/s-এর দাম কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র $১৬, যেখানে ২০২২ সালে এই দাম ছিল $৮০। এই পতনের ফলে এখন মাইনিং আরও লাভজনক ও কার্যকর হয়েছে। এ কারণেই অনেক হোম মাইনার এখন স্থিতিশীল, কম শব্দযুক্ত, এবং সহজে পরিচালনাযোগ্য ASIC মডেলগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
তবে সবশেষে এটাও সত্য, একক ASIC মাইনিং এখনো একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খেলা যেখানে ভাগ্য, প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ সবার ওপর আপনার সাফল্য নির্ভর করে।
৩. পুল মাইনিং – সংখ্যার শক্তিতে সাফল্য
বিটকয়েন মাইনিংয়ে এককভাবে সফল হওয়া অনেক কঠিন। তাই ২০২৫ সালে বেশিরভাগ হোম মাইনাররা পুল মাইনিংকেই বেছে নিচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে আপনি আপনার হ্যাশরেট হাজার হাজার খনির সাথে একত্রিত করেন। যখন পুলটি একটি ব্লক মাইন করতে সক্ষম হয়, তখন পুরস্কার সবাই মিলে ভাগ করে নেয়। এতে বড় অঙ্কের পুরস্কারের পরিবর্তে আপনি ছোট ছোট কিন্তু নিয়মিত আয় পাবেন যা বেশি নিশ্চিত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ।
ধরুন আপনি একটি Antminer S21 Hydro ব্যবহার করে ৪০০ TH/s হ্যাশরেট দিচ্ছেন। পুলে এই অবদানের ভিত্তিতে আপনি প্রতিদিন সামঞ্জস্যপূর্ণ আয় দেখতে পাবেন। বৃহত্তম মাইনিং পুল যেমন Foundry USA, Antpool, F2Pool ও ViaBTC প্রতি মাসে হাজার হাজার ব্লক মাইন করে। এদের মধ্যে অনেকে FPPS (Full Pay Per Share) মডেল ব্যবহার করে – অর্থাৎ আপনি প্রতিটি বৈধ শেয়ারের জন্য পেমেন্ট পাবেন, ব্লক মাইন হোক বা না হোক। অন্যদিকে কিছু পুল PPLNS (Pay Per Last N Shares) মডেল ব্যবহার করে, যেখানে শুধুমাত্র ব্লক খুঁজে পেলে পেমেন্ট দেওয়া হয়, তবে সময়ের সাথে এর রিটার্ন একটু বেশি হতে পারে।
পুল মাইনিং শুরু করা খুব সহজ। একটি পুলে অ্যাকাউন্ট খুলুন, আপনার ASIC মাইনারকে পুলের সার্ভারে যুক্ত করুন, বিটকয়েন পেমেন্ট ঠিকানা দিন এবং ওয়েব ড্যাশবোর্ড থেকে আয় পর্যবেক্ষণ করুন। এই পদ্ধতিতে আয় বিশাল না হলেও তা নিয়মিত হয়, যা অনেকের জন্য যথেষ্ট। তবে আপনি যদি মাইনিং এর যন্ত্র, সেটআপ ও বিদ্যুৎ খরচ এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে আছে আরও একটি উপায় সেটি হলো ক্লাউড মাইনিং।
৪. ক্লাউড মাইনিং – মেশিন ছাড়াই সহজে মাইনিং করার উপায়
যারা বিটকয়েন মাইনিং করতে চান কিন্তু নিজে হার্ডওয়্যার সেটআপ করতে চান না, তাদের জন্য ক্লাউড মাইনিং হতে পারে একটি সহজ বিকল্প। এতে আপনি একটি দূরবর্তী কোম্পানি থেকে হ্যাশ পাওয়ার ভাড়া নেন, যারা আপনার পক্ষে মেশিন চালায়, ঠান্ডা রাখে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। আপনার কোনও যন্ত্র কিনতে হয় না, বিদ্যুৎ বিল বা অতিরিক্ত শব্দ নিয়ে ভাবতেও হয় না। শুধু নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে একটি চুক্তি কিনলেই আপনি সেই খননের লাভের একটি অংশ পেতে পারেন।
ব্যবহারকারীর দিক থেকে বিষয়টি সহজ: আপনি একটি ক্লাউড মাইনিং কোম্পানি বেছে নেবেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ হ্যাশ পাওয়ার ভাড়া নেবেন এবং টাকা পরিশোধ করবেন। কোম্পানিটি তাদের নিজস্ব খনির ফার্মে সেই শক্তি ব্যবহার করে বিটকয়েন মাইন করবে এবং আপনার অংশ অনুযায়ী আপনাকে পেমেন্ট দেবে। এটি একদম ঝামেলামুক্ত, তবে কিছু ঝুঁকি রয়েছে।
এই পদ্ধতিকে ঘিরে অনেক প্রতারণার অভিযোগ আছে। অনেক ভুয়া কোম্পানি বেশি লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে ঠকিয়েছে। অনেক সময় মাইনিং-এর কঠিন পরিবেশ, বেশি খরচ, ও রক্ষণাবেক্ষণ ফি-এর কারণে লাভ খুবই কম বা একেবারেই হয় না। এখানে আপনি এমন একটি যন্ত্রের উপর ভরসা করছেন যা আপনি কখনও নিজের চোখে দেখেননি।
তবুও, NiceHash, BitDeer, ECOS ইত্যাদি কিছু নামী ও বিশ্বাসযোগ্য ক্লাউড মাইনিং কোম্পানি রয়েছে, যারা স্বচ্ছভাবে কাজ করে। এদের অনেকেই আপনাকে কয়েন ও পুল নির্বাচন করার সুবিধাও দেয়। তবুও, লাভ তুলনামূলকভাবে কম হয় – বিশেষ করে যদি বাজারে মন্দা চলে বা হ্যাশরেট বেড়ে যায়।
ক্লাউড মাইনিং তাদের জন্য উপযোগী হতে পারে, যাদের বাড়িতে খনির সরঞ্জাম বসানোর জায়গা বা সস্তা বিদ্যুৎ নেই, এবং যারা কম পরিশ্রমে মাইনিং এক্সপোজার চান। তবে, যাদের লক্ষ্য ধারাবাহিক আয় কিংবা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন, তাদের জন্য নিজস্ব হার্ডওয়্যার দিয়ে মাইনিং বা সরাসরি বিটকয়েন কিনে রাখা আরও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
সারাংশ
২০২৫ সালে বসে বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট একমাত্র সঠিক উপায় নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি ঠিক কী চান তার উপর। কারও জন্য এটি হতে পারে শেখার অভিজ্ঞতা, কারও জন্য আয়ের উৎস, আবার কারও জন্য নিছক একটি প্রযুক্তিগত শখ।
যারা কম খরচে মাইনিংয়ে যুক্ত হতে চান, তাদের জন্য লটারি মাইনিং একটি মজার অপশন—যদিও ফল পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এটি অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু শিক্ষানবিশদের জন্য এক ভালো শুরু। অন্যদিকে, ASIC মাইনিং হলো পেশাদারদের জন্য, যেখানে আপনি নিজেই হার্ডওয়্যার পরিচালনা করেন, পুরস্কারও পুরো নিজের হয়, কিন্তু সেইসাথে ঝুঁকিও বড় হয়।
মাইনিং পুল হলো সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়—এখানে আপনি অন্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করেন এবং ছোট ছোট স্থায়ী আয় পান। এটি যারা নিয়মিত রিটার্ন চান তাদের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, ক্লাউড মাইনিং আপনাকে হার্ডওয়্যার ঝামেলা ছাড়াই মাইনিংয়ে অংশ নিতে দেয়, কিন্তু এতে লাভ এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকটাই অনিশ্চিত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনি কী করতে চান, তা পরিষ্কারভাবে জানা। আপনি যদি সময় নিয়ে শেখার আগ্রহ রাখেন এবং ধীরে ধীরে স্যাটোশি জমাতে চান, তবে অবশ্যই এমন একটি সেটআপ খুঁজে পাওয়া সম্ভব যা আপনার প্রয়োজন মেটাবে। মনে রাখবেন, বুঝেশুনে বিনিয়োগই এখানে দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্ত।
What's Your Reaction?






