ক্রিপ্টো ট্রেডিং এর জন্য ‘‘ডে ট্রেডিং না হোল্ডিং” কোনটি বেছে নেওয়া উচিত?

দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায়, সঠিক বিনিয়োগের পদ্ধতি বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপ্টোর দামের প্রতিদিন ওঠানামা আর নতুন নতুন ট্রেন্ডের ভিড়ে, অনেক বিনিয়োগকারী দুটো জনপ্রিয় বিকল্প বাছাই করতে দ্বিধান্বীত হন, একটি ডে ট্রেডিং অন্যটি হোল্ডিং। ডে ট্রেডিংয়ে স্বল্প সময়ে লাভ করার সুযোগ থাকলেও, হোল্ডিং মানে হলো ধৈর্য ধরে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ধরা রাখা।

Apr 23, 2025 - 00:36
Apr 23, 2025 - 01:19
 0  37
ক্রিপ্টো ট্রেডিং এর জন্য ‘‘ডে ট্রেডিং না হোল্ডিং”  কোনটি বেছে নেওয়া উচিত?

ভুমিকা:

 দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায়, সঠিক বিনিয়োগের পদ্ধতি বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপ্টোর দামের প্রতিদিন ওঠানামা আর নতুন নতুন ট্রেন্ডের ভিড়ে, অনেক বিনিয়োগকারী দুটো জনপ্রিয় বিকল্প বাছাই করতে দ্বিধান্বীত হন, একটি ডে ট্রেডিং অন্যটি হোল্ডিং। ডে ট্রেডিংয়ে স্বল্প সময়ে লাভ করার সুযোগ থাকলেও, হোল্ডিং মানে হলো ধৈর্য ধরে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ধরা রাখা। তাহলে, আপনার জন্য কোনটা ভালো? এর উত্তর সবার জন্য এক নয়। এই লেখায় আমরা এই দুই পদ্ধতির মূল বিষয়গুলো সহজ করে বোঝাব, তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরব, আর আপনাকে এমন একটা কৌশল বেছে নিতে সাহায্য করব যা আপনার সময়, লক্ষ্য আর ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতার সঙ্গে মিলে যায়।

চলুন শুরুতে ডে ট্রেডিং আর হোল্ডিং এর মূল ধারণাগুলো দেখে নিই।

ডে ট্রেডিং

ডে ট্রেডিং এমন একটি কৌশল যেখানে দিনের মধ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করা হয়। এতে ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের ওঠানামার সুযোগ নিয়ে লাভের চেষ্টা করা হয়। ব্যবসায়ীরা সাধারণত প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, বাজার প্রবণতা এবং বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে ঝুঁকি কমাতে ও সফলতা বাড়াতে চেষ্টা করেন।

সংক্ষেপে ডে ট্রেডিং

বাজার বিশ্লেষণ: অল্প সময়ে দামের ওঠানামা আন্দাজ করতে ট্রেডাররা চার্ট, ট্রেন্ড ও গতিবিধি বিশ্লেষণ করেন।

দ্রুত লেনদেন: বেশিরভাগ ট্রেডই কয়েক মিনিট বা ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

লিভারেজ ও মার্জিন: কেউ কেউ ধার করা টাকায় ট্রেড করেন যাতে লাভ বাড়ে, যদিও এতে ক্ষতির আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

মনিটরিং: বাজারের অবস্থা বুঝে সঠিক সময়ে লেনদেন করতে প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হয়।

ডে ট্রেডিংয়ের সুবিধা

দ্রুত লাভের সম্ভাবনা: সঠিকভাবে করলে অল্প সময়েই লাভ করা যায়, এমনকি মিনিটের মধ্যেও।

অস্থিরতা কাজে লাগানো: দামের ওঠানামা থেকে প্রায়ই লাভের সুযোগ তৈরি হয়।

শেখার সুযোগ: দ্রুত ট্রেডের মাধ্যমে বাজার বোঝা ও বিশ্লেষণ শেখার ভালো সুযোগ হয়, যা ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়ায়।

ডে ট্রেডিংয়ের অসুবিধা

উচ্চ ঝুঁকি: হঠাৎ দামের উঠা নামা করার  ফলে বড় ক্ষতি হতে পারে। অনেক ট্রেডার দীর্ঘমেয়াদে লোকসানের সম্মুখীন হন।

মনোযোগ ও নিয়মানবর্তিতা দরকার: নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার, আর ধারাবাহিক সফলতার জন্য নিয়মানুবর্তিতা জরুরি।

মানসিক চাপ: বাজারের দাম ঘন ঘন পরিবর্তন হলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

লেনদেন খরচ: বারবার ট্রেড করলে লেনদেন ফি বেড়ে যায়, যা মোট লাভের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

হোল্ডিং কী?

হোল্ডিং হলো এমন এক দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ কৌশল যেখানে কেউ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে সেটা অনেক দিন ধরে রাখে, এমনকি বাজারে দাম ওঠানামা করলেও বিক্রি করে না। হোল্ডিং বা HODLing  শব্দটি আসলে এক ব্যবহারকারীর বানান ভুল থেকে এসেছে, যা পরবর্তীতে “Hold On for Dear Life” অর্থাৎ শক্ত করে ধরে রাখার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

সোজা কথায়,  হোল্ডিং  বা HODLing মানে হচ্ছে খুব কম লেনদেনে দীর্ঘমেয়াদে ক্রয় ধরে রাখা। ডে ট্রেডিংয়ের মতো প্রতিদিন বাজার দেখা লাগে না। তবে, এতে সফল হতে হলে ধৈর্য ও নিয়ম মানা জরুরি, কারণ অল্প সময়ের দামের ওঠানামা উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের লাভের দিকেই মনোযোগ দিতে হয়।

হোল্ডিং-এর সুবিধা

কম চাপ: প্রতিদিন দামের ওঠানামা নিয়ে ভাবতে হয় না, মানসিক চাপও অনেক কম।

সহজ কৌশল: জটিল ট্রেডিং টুলস বা ঘন ঘন বাজার পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন নেই।

দীর্ঘমেয়াদে লাভের সম্ভাবনা: বিটকয়েন সহ অনেক ক্রিপ্টো কয়েন সময়ের সাথে  অনেক বড় লাভ দেখিয়েছে।

কম খরচ: কম ট্রেড করার কারণে লেনদেন ফি-ও কমে যায়।

হোল্ডিং এর অসুবিধা

দাম কমে গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা: যদি বাজার ধসে যায়, তাহলে হাতে থাকা সম্পদের মূল্য অনেক কমে যেতে পারে।

ধৈর্যের প্রয়োজন: লাভ করতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে, এমন কি কয়েক বছরও।

সুযোগ হাতছাড়া: অনেক সময়  কয়েন ধরে রাখার মানে হলো স্বল্পমেয়াদি লাভের সুযোগগুলো হাতছাড়া করা।

সব কয়েন টিকতে পারে না: কিছু কিছু প্রজেক্ট রয়েছে যেগুলো সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে পারে, ফলে বিনিয়োগও নষ্ট হতে পারে।

 

অবস্থা

ডে ট্রেডিং

হোল্ডিং বা HODLing

সময় দেওয়ার প্রয়োজন

অনেক বেশি

খুব কম

ক্ষতির সম্ভাবনা

খুব বেশি (বেশিরভাগ ব্যবসায়ী অর্থ হারান)

মাঝারি

লাভের সম্ভাবনা

অল্প সময়ের মধ্যে মুনাফা

অনেকদিন পর সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি

বাজার সম্পর্কে ধারনা

বেশ ভালো বা পাকা

বেসিক থেকে মাঝারি স্তরের

আবেগগত সম্পৃক্ততা

অনেক বেশি আবেগ যুক্ত

কম আবেগ যুক্ত

ফি এবং খরচ

বেশি খরচ (বারবার কেনাবেচা করলে)

কম খরচ (কম কেনাবেচা করলে)

 

আপনার জন্য কোন কৌশলটি সঠিক?

ডে ট্রেডিং আর হোল্ডিং এই দুইটির মধ্যে কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে, তা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:

১. আপনার ঝুঁকি সহ্য করার মানসিকতা

যদি আপনি ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন আর বড় লাভের জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে ডে ট্রেডিং আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।

আর যদি আপনি নিরাপদে ধীরে ধীরে লাভ পেতে চান, তাহলে হোল্ডিং  হতে পারে আপনার জন্য সেরা কৌশল।

২. সময় দেওয়ার সুযোগ

আপনি যদি প্রতিদিন অনেক সময় ধরে বাজার পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, তাহলে ডে ট্রেডিং আপনার জন্য কার্যকর হতে পারে।

কিন্তু যদি আপনার হাতে সময় কম থাকে এবং আপনি একটি শান্ত বিনিয়োগ কৌশল চান, তাহলে হোল্ডিং আদর্শ পছন্দ।

৩. বাজার সম্পর্কে জ্ঞান

ডে ট্রেডিংয়ের জন্য বাজার বিশ্লেষণ ও চার্ট বোঝার ভালো ধারণা থাকা জরুরি।

হোল্ডিং-এর জন্য দরকার আপনার কেনা সম্পদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি মজবুত বিশ্বাস ও মৌলিক জ্ঞান।

৪. মানসিক দৃঢ়তা

যদি আপনি চাপের মধ্যেও যদি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাহলে ডে ট্রেডিং চেষ্টা করতে পারেন।

তবে যদি আপনি ধীর-স্থির, কম চাপযুক্ত পন্থা পছন্দ করেন, তাহলে হোল্ডিং আপনার জন্য সঠিক পথ।

আপনি কি দুটি কৌশল একসাথে ব্যবহার করতে পারেন?

হ্যাঁ, অনেক বিনিয়োগকারী হাইব্রিড কৌশল ব্যবহার করেন, যাতে একসাথে দুই দিক থেকেই লাভ পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি BTC বা অন্য বিশ্বাসযোগ্য কয়েন ধরে রাখার জন্য একটি হোল্ড পোর্টফোলিও রাখতে পারেন। পাশাপাশি, স্বল্পমেয়াদী দামের ওঠানামা থেকে লাভ তোলার জন্য আলাদা একটি পোর্টফোলিও দিয়ে ডে ট্রেডিং করতে পারেন।

শেষ কথা

ডে ট্রেডিং এবং হোল্ডিং দুটোতেই নিজস্ব কিছু সুবিধা ও ঝুঁকি রয়েছে। তাই একটিকে বেছে নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক লক্ষ্য, সময় এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন।

যদি আপনি শৃঙ্খলাপূর্ণ হন ও বাজার বুঝতে সময় দিতে পারেন, তাহলে ডে ট্রেডিং আপনার জন্য মানানসই হতে পারে। আর যদি আপনি কম ঝামেলা ও ধৈর্যের কৌশল পছন্দ করেন, তাহলে হোল্ডিং হবে জন্য উপযুক্ত।

সবশেষে, যেটাই করুন, অবশ্যই নিজে গবেষণা করুন, ঝুঁকি বুঝে বিনিয়োগ করুন এবং কখনই এমন টাকা বিনিয়োগ করবেন না যেটা হারালে আপনাকে কষ্ট হবে। বাজারে কী হচ্ছে তা জানা এবং একটি ট্রেডিং জার্নাল রাখা ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

J. B. CK As a Content Writer specializing in blockchain and a range of other topics, I bring proven expertise in crafting engaging, search engine-optimized content. Since May 2023, I have been working at Edulife Agency, a well-known company in Bangladesh, where I create content that boosts organic traffic and drives higher visibility on search engines. In addition to content writing, I specialize in on-page SEO and keyword research. By leveraging tools like Yoast and Rank Math SEO plugins, I optimize websites to ensure they rank higher and perform better in search engine results. My expertise covers a wide range of SEO services, including keyword research, meta tag optimization, internal and external link building, content and image optimization, and more.